অনলাইন ডেস্ক-
ঢাকা ক্রাইম নিউজ: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আটটি বার্তা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হতাহতদের তালিকা তৈরি, হত্যা ও হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দিতে চাপ তৈরি করা।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এসব বার্তাসংবলিত একটি বিবৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলামের বক্তব্য’ শিরোনামে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে নাহিদের বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বিবৃতিটি দেওয়ার বিষয়ে নাহিদের সম্মতি ছিল।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেওয়া বিবৃতির বার্তাগুলো হলো, রংপুরের আবু সাঈদসহ নিহতদের স্মরণ করুন, তাদের কবর জিয়ারত করুন, পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। হাসপাতালে থাকা আহতদের সহযোগিতার চেষ্টা করুন, সক্ষমতা থাকলে নিহতদের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করতে সহায়তা করুন, মর্যাদার সঙ্গে দাফন ও জানাজায় অংশ নিন। হতাহতদের তালিকা তৈরি ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, হত্যা ও হামলায় সরাসরি জড়িত সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করে রাখুন। যারা যে স্থানে আন্দোলন করেছেন, নতুন করে সংগঠিত হন, নিরাপদে থাকুন, চিকিৎসা নিন ও গ্রেপ্তার এড়ান। ফেসবুকে ক্ষোভ না ঝেরে মাঠের প্রস্তুতি নিন, ইন্টারনেটনির্ভর না হয়ে বিকল্প কিছু পরিকল্পনা করুন, আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে দ্রুত সবার সঙ্গে যোগাযোগ করব।
শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস ও হল খোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দিন, শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রবাসীরা আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ক্র্যাকডাউন ও হত্যা-নিপীড়নের ঘটনা প্রচার করুন এবং দেশে আন্দোলনরত ছাত্র-নাগরিকদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ান।
“ছাত্র-নাগরিক হত্যা ও গুম-খুনের বিচার, রাষ্ট্রীয় ক্ষয়ক্ষতির বিচার, মামলা প্রত্যাহার ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি, আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং সব ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী রাজনীতির উৎখাত ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচারের দাবিতে” দফাভিত্তিক আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
আপিল বিভাগের রায়ের পর কোটা সংস্কার করে সরকারের দেওয়া প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কোটা সংস্কারের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটিকে তারা চূড়ান্ত সমাধান মনে করছেন না। তারা মনে করেন, যথাযথ সংলাপের পরিবেশ তৈরি করে নীতিনির্ধারণী জায়গায় সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে।
অংশীদারদের অংশগ্রহণে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে, যা কোটা পদ্ধতির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও তদারক করবে। কোটার যেকোনো পরিবর্তন এই কমিশনের সুপারিশ সাপেক্ষে হতে হবে। এছাড়া সংসদে আইন পাসের বিষয়টি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তাই কোটা সমস্যার এখনও চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। ২০১৮ সালেও আন্দোলনের চাপে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। ছয় বছর পরই সেটি বাতিল হয়। তাই এই পরিপত্র বা প্রজ্ঞাপনের ‘খেলায়’ তারা আর বিশ্বাস করেন না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর কেবল কোটা সংস্কারের বিষয়ে সীমাবদ্ধ নেই। তাই প্রজ্ঞাপন জারির সঙ্গেই এ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে না।