রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
বনানীতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মিশু ছাত্রদল নেতা সাব্বিরের চাঁদাবাজি স্পেনে ৭০০ বছরেরও বেশি মুসলিম শাসন” পতনের নেপথ্যে যে কারণ!! শাহবাগে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের সড়ক অবরোধ মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়তে হবে গেইটলক করে মহাখালীতে চায়ের দোকানের আড়ালে মাদক ব্যবসা স্বামী স্ত্রীর  ছাএ-জনতার আন্দোলন দমাতে অর্থ-অস্র দিয়ে সহায়তা করেন গুলশান থানা শ্রমিক লীগ নেতা রাজু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুবিধাভোগীরা আঃ লীগের সাথে ছিলেন, আঃ লীগ বিরোধীদের সাথেও আছেন ২ বিচারপতি পদের মর্যাদা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন পদত্যাগই উত্তম -Dhaka Crime news24 চাকুরী দেওয়ার নামে ভূয়া ক্যাপ্টেন সৌরভের প্রতারণা || ছাত্র আন্দোলনে ২ পিস্তল হাতে গুলি চালানো যুবক গ্রেপ্তার

শূন্য সহনশীলতা নীতি প্রশ্নবিদ্ধ জঙ্গি সাদেক দমনে সরকার ব্যর্থ

শামীম আহমদ :
ঠাকুর ঘরের সব কলা খেয়েছে জঙ্গি নেতা মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক। তবুও সে বলছে আমি কলা খাইনি। বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় তন্ন তন্ন করে খুঁজে সাদেকের মতো বড় দুর্নীতিগ্রস্থ লোক আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ জালিয়াতি, সরকার পতনে অর্থায়ন, উগ্রবাদী সংগঠনে অর্থায়ন, জামাত শিবিরকে প্রতিপোষণ, বিদেশে অর্থ পাচার, স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে সরকারের সকল নির্দেশ উপেক্ষা করে অবৈধপথে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর ভুয়া উপাচার্য যুদ্ধাপরাধী মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক। সাদেকদ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তিরা প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, দুদক, পুলিশ, আদালতসহ সরকারের সমস্ত দপ্তরে বার বার অভিযোগ দিলেও কোন কতৃপক্ষ সেই অভিযোগ আজ পর্যন্ত আমলে নেয়নি। আদালত সাদেকের নামে মামলা গ্রহণ করতে ভয় পায়! যদি কোন বিচারক মামলা নেয় পরবর্তীতে তা অদ্ভুতভাবে খারিজ হয়ে যায়! কোন ভাবেই সরকার তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করে না। জঙ্গি দমনে সরকারের শূন্য সহনশীলতা নীতি থাকলেও জঙ্গি নেতা মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক দমনের সরকার ব্যর্থ।
জঙ্গি সাদেকের সঙ্গী হেফাজত ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হককে সরকার গ্রেফতার করলেও জঙ্গি নেতা মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক দমনের সরকারের নমনীয়তা নিয়ে সকালের সময় বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছে জঙ্গি দমনে আপনার বাহিনী (পুলিশ) সফল কতোটুকু? দৈনিক সকালের সময়কে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তাই এখন কেউ বিচ্যুত আচরণ কিংবা লুকিয়ে লুকিয়ে অপরাধ করেও পার পাবে না। তিনি বলেন, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সবখানেই পুলিশের নজরদারি রয়েছে। জঙ্গি দমনে তার বাহিনীর আলাদা টীম এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এর গুরুত্বআরোপ করে তিনি বলেন, পুলিশে বহু সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তারা সহজেই সকল অপরাধ কর্মের নজরদারির মাধ্যমে সেই অপরাধীকে দ্রুত দমন করতে সক্ষম হয়। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদীরা দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে চায়। তারা তরুণ ছেলেদেরকে ভুল পথে ধাবিত করে। উগ্রবাদী মানুষকে দেশের সভ্য সমাজের মানুষেরা পছন্দ করে না। তাই জঙ্গি হিসেবে পরিচিত হওয়া সবার জন্য লজ্জার। এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ভুয়া উপাচার্য যুদ্ধাপরাধী মাওলানা সাদেক একজন চিহ্নিত জঙ্গি, তাকে দমনে সরকার সহনশীল কিনা জানতে চাইলে আইজিপি বলেন জঙ্গিবাদকে অনেকাংশেই দমন করা হয়েছে। মুসলমানদের খাটো করার জন্য জঙ্গিবাদের সাথে ইসলামকে জড়ানো হচ্ছে। সাদেক ইসলামের লেবাসে ছদ্মবেশি জঙ্গি হলে তা তদন্ত করে দেখবে পুলিশ। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জঙ্গিবাদ রুখে দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন পুলিশের এই মহাপরিদর্শক।
জঙ্গি নেতা মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেকের অপরাধ নিয়ে কথা বলতে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তিনি টেলিফোনে দৈনিক সকালের সময়কে জানান আজ তার জন্য সাক্ষাৎ কঠিন হতে পারে পরবর্তী দিন কিংবা তার পরে যেকোনো দিন তিনি সাক্ষাৎ করে বিষয়টি শুনবেন এবং কোন অভিযোগ তার হাতে পেলে তিনি বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টকাণ্ডের পর থেকেই মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। এর পরে ১৮ এপ্রিল রবিবার গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম ও ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের যৌথ অভিযানে মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। মামুনুল হক গ্রেফতারের পরে তার মুক্তির দাবিতে ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় এই সাদেকের নেতৃত্বে মিছিলের চেষ্টা হলে পুলিশ তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ২০১০ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর ভূয়া উপাচার্য পরিচয়ে বিশ্ববিদ্যালটিতে ভর্তি হতে আসা হাজার হাজার শিক্ষার্থীদেরকে ভূয়া সনদ প্রদান করে অবৈধ ভাবে বহু সম্পদের মালিক হয়েছে যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিনেতা মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক। সমাজে উচ্চপর্যায়ের নাগরিকদের কাছে সুশীল সেজে প্রতারণা করার জন্য নিজের নামে এমিরেটস অধ্যাপক উপাধি ব্যবহার করতো এই জঙ্গি নেতা। দৈনিক সকালের সময়ে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পরে এমিরেটস উপাধি এবং উপাচার্য পদ সবই হারিয়েছে। সকালের সময়ের প্রতি বিক্ষুব্ধ প্রতারক সাদেক একজন উকিলের মাধ্যমে দৈনিক সকালের সময়ের কাছে ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলো। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান হওয়ার পরে ঢাকায় বড় বড় জঙ্গি গোষ্ঠী দমন করার পরে পুলিশ প্রশাসন সরকারের পক্ষে ঘোষণা দেন “জঙ্গি দমনে সরকারের শূন্য সহনশীলতা নীতি”। জঙ্গি দমনে সরকারের একাধিক ইউনিট কাজ করার পরেও জঙ্গি নেতা মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেকে দমন করতে সরকারের নমনীয়তা লক্ষ করা গেছে।
দৈনিক সকালের সময় সাদেকের অপরাধকর্ম একাধিকবার প্রকাশ হলেও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রীর নজরে আনলে মন্ত্রী দৈনিক সকালের সময়কে বলছেন সাদেকর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছি। কমিশনের বেসরকারি ইউনিট পরিচালক ওমর ফারুক দৈনিক সকালের সময়কে বলছেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের দুর্নীতি এবং সাবেক উপাচার্য সাদেকের বিষয়ে কিছু অভিযোগ আমরা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে গতবছরেই শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রতিবেদনের ফলোআপ সম্পর্কে আপডেট জানতে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ ফরহাদ হোসের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি সকালের সময়কে বলছেন কমিশ থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন মন্ত্রণালয়ের কাছে কোন পর্যবেক্ষণ পাঠায়নি তাই এর বেশি কিছু তার জানা নাই। কমিশন জঙ্গি নেতা মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ দেয়ার পরেও দুর্নীতি দমন কমিশন কেন দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে এই উপসব দুদকে খোঁজ নেয়ার পরামর্শ দেন।
জঙ্গি নেতা মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেকের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইন প্রয়োগ হচ্ছে না। এটা সরকারের ব্যার্থতার প্রমাণ কিনা তা জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চান বলছেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারের ব্যার্থ হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা রয়েছে। কিছু জামাতি চক্র বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে এতে করে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদ জালিয়াতির খবর আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পাই। এটা দূখঃজনক। সরকারের ভেতরে জামাতি চক্র শক্তিশালী হয়ে উঠছে বলেও তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে বহু লোক আছে ওই জঙ্গি সাদেকের অনুসারী। সাদেক টাকা দিয়ে সকল দপ্তরের লোক ম্যনেজ করে চলে। সাংবাদিকরা ভূমিকা নিলে সাদেকের বিচার সহজে হবে বলে মন্তব্য করেন বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ।
২০০১ সাল থেকে ঢাকার উত্তরায় এবং পরবর্তীতে সাভার আশুলিয়ায় বঙ্গবন্ধু সড়কে সরকারের অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল তসরুপ বিদেশে অর্থ পাচার টাকার বিনিময়ে সনদ বিক্রি এবং জঙ্গি জামাত এবং যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিপোষণ দেয়াসহ নানারকম অভিযোগ থাকার পরেও আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি অবলম্বন করা সরকার এই জঙ্গি নেতা মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেকের অপরাধ ও অপকর্মের বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূয়া সনদ বিতরণ করতে ২০১৭ সালে তাদের আয়োজিত একটি সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। উপাচার্য ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন হয় কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী বলছেন আমি ওই সমাবর্তনে গিয়েছিলাম কিনা তা এখন মনে পড়ছে না। নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে আমি সঠিক উত্তর দিতে পারবো। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ওই সমাবর্তনের কোন অনুমতি দেয়নি তবুও কথিত আছে আপনি এককোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করে ওই সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করছেন! এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন প্রশ্নই ওঠেনা আমি কোন কাজের জন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ নেইনি। সরকারি কর্মকর্তাদের রয়ে সয়ে অল্প অল্প ঘুষ গ্রহণ করতেই পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন সাবেক এই মন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ।
এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আনিসুর রহমান বলছেন সাবেক ওই শিক্ষামন্ত্রীকে এক কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য তাকে রাজি করানো হয়েছিলো। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে চাকুরী হারানো শিক্ষক গোলাম রাব্বানী বলছেন ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে অতিথিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করানোর লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আক্তারুজ্জামানকে। সেই অবৈধ সমাবর্তনের মূল বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ততকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান। বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং সংস্থা ইউজিসির কোন কর্মকর্তা সেই সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বলছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ কবে কোথায় সমাবর্তন করছে সেবিষয়ে কমিশনের কোন কর্মকর্তা জ্ঞাত নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সুত্রে জানা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির নামে বাড়িভাড়া খাতে দুর্নীতি, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কোষাধ্যক্ষ ছাড়াই বেআইনিভাবে তহবিল পরিচালনাসহ নানা রকম অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে ২৮ বছরের পুরোনো এই ইউনিভার্সিটিটির বিরুদ্ধে। ২০০১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি অবৈধভাবে পরিচালিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ওই বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাষ্টি বোর্ড পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল ইউজিসি। এখন তারই আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়টির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক একজন দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়টির বাড়িভাড়া খাতে বড় ধরনের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। ক্যাম্পাস না থাকা সত্ত্বেও ক্যাম্পাস দেখিয়ে ভাড়া হিসেবে টাকা আত্মসাৎ করছে তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ব্যক্তি নামে ফ্ল্যাট কেনাছাড়াও তিনি একটি বাসভবনে অবস্থান করছে সেই বাড়িটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে। তিনি সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করছে। স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে গঠন করা ট্রাস্টের অনুকূলে বাড়িভাড়া পরিশোধসহ প্রতিটি লেনদেনই সন্দেহজনক ও আইনবহির্ভূত। মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ জঙ্গিবাদ ও সরকারবিরোধী কার্যক্রমে অর্থায়নে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই কিছু পদক্ষেপ মন্ত্রণালয় সরাসরি না নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। সাদেকের অপরাধের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে কঠোর হতেও পরামর্শ দিয়েছে মন্ত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয়টির সূচনালগ্ন থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২৭ বছর আচার্য ও রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা কোষাধ্যক্ষ ছিল না। এ জন্য আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল পরিচালনা করা হয়নি। তাই ২০১০ (সংশোধিত আইন পাসের সময়) সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির সব আয়-ব্যয় বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত বহির্নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানগুলোর (সিএ ফার্ম) মধ্যে থেকে সরকার মনোনীত একটি ফার্ম দিয়ে পুনরায় নিরীক্ষা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন ও পুনরায় নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া বা ইউজিসির পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং জরুরি একাডেমিক ব্যয় ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে অন্য কোনো খাতে ব্যয়, বিনিয়োগ বা তহবিল স্থানান্তর করতে পারবে না।
ছাত্র শিবির অধ্যুষিত বিভাগীয় শহর রংপুরের কারমাইকেল কলেজের সাবেক শিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান দীর্ঘদিন জঙ্গি নেতা মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেকের সাথে কাজ করেন। মাহাবুবুর রহমান ভূয়া উপাচার্য যুদ্ধাপরাধী মাওলানা সাদেকের বিশেষ সহকারী হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিচালনায় মনিটরিং কর্মকর্তা হিসেবে দ্বায়িত্ব নিয়ে এই মাহবুবুর রহমান বর্তমান উপাচার্য শাজানের ব্যাক্তিগত সহকারী পরিচয় দিলেও তার কোন ভিজিটিং কার্ড চাইলে তিনি বলেন আমি রুটিন দ্বায়িত্বে আছি। যুদ্ধাপরাধী মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেকের কুকর্মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাবেক ভিসি মাওলানা সাদেকের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সাদেকের সাথে যোগাযোগ করে তার মন্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার বার্তা পাঠিয়ে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে ধারা (৬) সাময়িক অনুমতির শর্তাবলী এর উপধারা (১০) এ বলা আছে, “প্রস্তাবিত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর বিবেচিত হইতে পারে এমন কোন কার্যকলাপে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করিবে না বা সন্ত্রাসী বা জঙ্গি তৎপরতা বা এই জাতীয় কোন কার্যকলাপে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোনভাবেই কোন পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করিবে না।” অথচ মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল তসরুপ করে বিভিন্ন জঙ্গি জামাত সংগঠন সমুহে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। অপরাধ, আমলযোগ্যতা ও দন্ড সংক্রান্ত আইনের (৪৯) ধারায় উল্লেখ আছে। সেখানে বেশ কয়েকটি ধারা ও উপ ধারা লঙ্ঘন করলে কিধরনের শাস্তি হবে তা বর্ননা করা হয়েছে। ধারা (৬) এর উপ ধারা (১০) লঙ্ঘন করলে যে শাস্তির কথা বলা আছে তা হচ্ছে- “এই আইনে তিনি অনূর্ধ্ব ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদন্ড অথবা ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থ দণ্ড অথবা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।” কেবল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘন নয়, দেশে প্রচলিত কোন আইন তোয়াক্কা করে না জঙ্গি নেতা মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত