শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
মহাখালীতে চায়ের দোকানের আড়ালে মাদক ব্যবসা স্বামী স্ত্রীর  ছাএ-জনতার আন্দোলন দমাতে অর্থ-অস্র দিয়ে সহায়তা করেন গুলশান থানা শ্রমিক লীগ নেতা রাজু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুবিধাভোগীরা আঃ লীগের সাথে ছিলেন, আঃ লীগ বিরোধীদের সাথেও আছেন ২ বিচারপতি পদের মর্যাদা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন পদত্যাগই উত্তম -Dhaka Crime news24 চাকুরী দেওয়ার নামে ভূয়া ক্যাপ্টেন সৌরভের প্রতারণা || ছাত্র আন্দোলনে ২ পিস্তল হাতে গুলি চালানো যুবক গ্রেপ্তার মুগদায় ছুরিকাঘাতে এক ভাই নিহত, গুরুতর আহত দুই ভাই হাসপাতালে যাত্রাবাড়ীতে দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবলকে ছুরিকাঘা ত মানিকগঞ্জে স্বামীর দেওয়া আগুনে দগ্ধ স্ত্রীসহ তিনজন পটুয়াখালীর বাউফলে ইজারা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩

‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত কোন পথে’ প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুসহ সর্বত্র আওয়ামী দোসররা

মোঃ সোহেল রানা-

ঢাকা ক্রাইম নিউজ: দলীয় রাজনীতি স্বাস্থ্য খাতকে দুর্বল করেছে। সেবার মান উন্নত করার চেয়ে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন ক্ষমতাসীনেরা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই সরকারি হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকার স্বাস্থ্য খাতে রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরি করবে, নাকি যোগ্য লোক দিয়ে স্বাস্থ্য খাত চালাবে, এ প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

 

২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগপর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রগুলো প্রবল শক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। নিয়োগ-বদলিতে প্রভাব রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে ব্যবসাও করেছেন স্বাচিপের নেতারা।

 

শুধু তা–ই নয়, বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সদস্যদের নানাভাবে বঞ্চিত করেছে স্বাচিপ। সব ধরনের যোগ্যতা থাকার পরও বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের যথাসময়ে পদোন্নতি হয়নি। তাঁদের কোনো প্রকল্পপ্রধান করা হয়নি। স্বাচিপ বা ড্যাবের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, অর্থাৎ স্বতন্ত্র চিকিৎসকেরাও বঞ্চিত হয়েছেন। নজির আছে, যোগ্যতার মূল্যায়ন না হওয়ায় অপমানে, হতাশায় অনেকে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।

 

ঠিক বিপরীত চিত্র ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। স্বাস্থ্য খাতের সব ক্ষেত্রে ছিল ড্যাবের একচ্ছত্র আধিপত্য। ড্যাবের নেতা-কর্মীদের দাপটে তখন স্বাচিপ ছিল কোণঠাসা। স্বতন্ত্রদের একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেই আমলেও। স্বাচিপ ও ড্যাবের দাপটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা খাত ও চিকিৎসা শিক্ষাব্যবস্থা। এদের গোষ্ঠীস্বার্থ স্বাস্থ্য খাতের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

 

স্বাস্থ্য খাতের সিংহভাগ কাজ বাস্তবায়িত হয় মূলত স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির মাধ্যমে। কর্মসূচিটি পাঁচ বছর মেয়াদি। চতুর্থ কর্মসূচি শেষ হয়েছে বছর দুয়েক আগে। পঞ্চম কর্মসূচি এ বছরের জুলাই মাসে শুরু হওয়ার কথা ছিল। এতে মূল টাকা দেয় সরকার, একটি অংশ দেয় উন্নয়ন–সহযোগীরা।

 

স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচি চলে ৩১টি অপারেশন প্ল্যান (ওপি) বা বিষয়ভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে। যেমন: পুষ্টি, সংক্রামক রোগ, অসংক্রামক রোগ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য, বিকল্প চিকিৎসা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য—এ ধরনের বিষয়ের জন্য পৃথক পৃথক ওপি। ওপিতে পাঁচ বছরের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকে।

 

প্রতিটি ওপিতে লোভনীয় তিনটি পদ আছে: লাইন ডিরেক্টর, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার। লাইন ডিরেক্টর থাকেন একজন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার থাকেন এক বা দুজন এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার থাকেন ২ থেকে ১০–১২ জন পর্যন্ত। বর্তমানে প্রায় সব পদ দখল করে আছেন স্বাচিপের সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে মেধা বা যোগ্যতা দেখা হয়নি। তাঁরা ছাত্রজীবনে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। সাধারণত সাবেক ছাত্রলীগের বড় ভাই লাইন ডিরেক্টর, বয়সে কিছু ছোট প্রোগ্রাম অফিসার এবং ছোট ভাই ডেপুটি প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কাজ করেন। অভিযোগ আছে, ভাইয়েরা এক জোট হয়ে স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা, বিদেশ সফর ও প্রশিক্ষণে দুর্নীতি করেন।

 

দলীয় রাজনীতি সেবা খাতকে কতটা দুর্বল করতে পারে, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ স্বাস্থ্য খাত। অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় স্বাস্থ্যখাতে সার্চ কমিটি করে যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে বের করতে হবে। বঞ্চনা বজায় রেখে, যোগ্য ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে স্বাস্থ্য খাত ঠিকভাবে চালানো যাবে না।

 

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পর জাতির উদ্দেশ্যে প্রথম ভাষণ দিয়েছেলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর এই ভাষণে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর নতুন বাংলাদেশ গঠনের দিকনির্দেশনা ও কর্মপরিকল্পনা উঠে এসেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা এ ভাষণকে গঠনমূলক আখ্যায়িত করে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তবে বেশিরভাগ পর্যবেক্ষকই মনে করছেন, তাঁর কর্মপ্রক্রিয়া ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন যে প্রশাসন যন্ত্র করবে, তা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার গড়ে তোলা। প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুসহ সর্বত্র তার দোসররা রয়ে গেছে। এদের দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে না। প্রায় সব মন্ত্রণালয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের নিয়োগকৃত সচিব এবং বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা রয়ে গেছে। তাদের বহালতবিয়তে রেখে ছাত্র-জনতার নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন কোনোদিনই সফল হবে না। পদে পদে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করবে। অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে কিছু পরিবর্তন করেছে। তবে এ পরিবর্তন বেশিরভাগই বদলির মধ্যে সীমাবদ্ধ। ‘এধারকা মাল ওধার, ওধারকা মাল এদারের মতো’ এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে বদলি করেছে। এসব সচিব ও কর্মকর্তা যেখানেই থাকুক না কেন, তারা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনারই লোক। তারা সেখান থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং তার সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করবে।

 

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে সুমিষ্ট ও সুললিত কথা ও পরিকল্পনা থাকলেও তা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের দিয়ে কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে গভীর সংশয় ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের তৈরি করা প্রশাসন নামক ডিনামাইটের উপর বসে আছে। ফ্যাসিবাদের দোসরদের দিয়ে তৈরি এই প্রশাসন অক্ষত রাখলে যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। ফলে প্রধান উপদেষ্টার মিষ্টি কথা দিয়ে কোনো কাজ হবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং তাঁর প্রতি জনগণের যে আকাক্সক্ষা, তা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দোসরদের বহাল রেখে বাস্তবায়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো সময় দেয়া এবং সহযোগিতার কথা বললেও সিভিল প্রশাসনসহ সব অর্গানে ফ্যাসিবাদের দোসরদের দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার কোনোদিনই হবে না। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা প্রধান উপদেষ্টার কর্ম ও পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবে, এ আশা দুরাশা ছাড়া কিছু নয়। অন্তর্বর্তী সরকারকে যেখানে স্বৈরাচারের প্রশাসনকে সমূলে উৎপাটনে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া জরুরি, সেখানে তাকে কচ্ছপ গতিতে চলতে দেখা যাচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে, স্বৈরাচার সরকারের দোসরদের গুছিয়ে উঠতে সময় দেয়া। এটা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে সিভিল প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার, দুর্নীতি দমন কমিশন, আদালত, স্বাস্থ্যখাতসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল স্তর থেকে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজনকে দ্রুত অপসারণ ও মূলোৎপাটন করতে হবে। তাদের অপসারণ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার কোনোভাবেই কাজ করতে পারবে না এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নও বাস্তবায়িত হবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত