রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
ছাত্র আন্দোলনে ২ পিস্তল হাতে গুলি চালানো যুবক গ্রেপ্তার মুগদায় ছুরিকাঘাতে এক ভাই নিহত, গুরুতর আহত দুই ভাই হাসপাতালে যাত্রাবাড়ীতে দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবলকে ছুরিকাঘা ত মানিকগঞ্জে স্বামীর দেওয়া আগুনে দগ্ধ স্ত্রীসহ তিনজন পটুয়াখালীর বাউফলে ইজারা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩ দেশটাকে শেখ হাসিনা বাপের জমিদারি ভেবেছিলেন : রিজভী ১০ দিনে, যৌথ অভিযানে ১৪৪ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৬৪ ৬ মাস পর জামিন পেলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল গোপালগঞ্জে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর আওয়ামী লীগের হামলা ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে গণঅধিকার পরিষদের বৈঠকে স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব’

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার পর আত্নগোপণে ॥ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা সিআইডির সাবেক কর্মকর্তা উত্তম দুদকের জালে, শতাধিক কোটি টাকার অবৈধ অর্থ বাড়ি গাড়ি

প্রতিবেদক : সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস দুদকের জালে। দুদকের নোটিশকে আমলে না নিয়ে তিনি অবৈধপন্থার অর্জিত শতাধিক কোটি টাকা সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিনব পন্থায় ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়ে নিয়েছে। ৩০ মে ঢাকার একটি আদালত উওম কুমারের বিরুদ্ধে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি করায় তিনি ও তার পরিবার আত্নগোপণে গেছেন। দুদক ও আইন শৃংখলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।

সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাসের অঢেল সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঢাকায় চারটি ফ্ল্যাট, বাড়ি, ব্যাংকে অঢেল টাকা রয়েছে পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তার। এছাড়া গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়ায় জমিসহ আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপন। দুদকের প্রাথমিক তদন্তে এসব তথ্য মিলেছে। এখন উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি।

অন্যদিকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর সাবেক এই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাসের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংক থেকে ইতোমধ্যে টাকা তুলে নেওয়াসহ সম্পদ অন্যের নামে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।

এদিকে গত ৩০ মে ঢাকার একটি আদালত উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ইতোমধ্যে উত্তমের দেশত্যাগ ঠেকাতে বিমানবন্দর ও দেশের ইমিগ্রেশনগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দুদক তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়ায় এখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাসের আয় বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পাওয়ার পর তার সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ দেয় দুদক। তবে তিনি দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেননি। এরপর তাকে সশরীরে দুদকে হাজির হতে নোটিশ দেয়া হলেও হাজির না হয়ে নামে বেনামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা তুলে নেন।

উত্তম কুমার ও তার স্ত্রীর বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসেব থেকে দুদক জানতে পারে এই দম্পতি প্রায় ৫৫ কোটি টাকা লেনদেন করেছে। এই লেনদেনের অর্থ উত্তম কুমারের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জ্য নয়।

গণমাধ্যম জানতে পেয়েছে, উত্তম কুমারের নামে বেনামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় চারটি ফ্ল্যাট এবং বিলাসবহুল গাড়ি, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ায় তার বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পত্তির (জমি) সন্ধান পেয়েছে দুদক।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, উত্তম কুমারের অস্থাবর সম্পদের খোঁজ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠায়। পরে দুদক জানতে পারে উত্তম কুমারকে নোটিশ করার পরই তিনি সব ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও দুদকের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে বিদেশ চলে যাওয়ার জন্য ভিসা রেডি করেছেন। এরপর তার বিরুদ্ধে আদালত বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। উত্তম কুমার বিশ্বাস ও তার স্ত্রী আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য প্রমান পেয়েছে দুদক। দুদকের অনুসন্ধানে তারা জানতে পেরেছেন, উত্তম কুমার বিশ্বাস পুলিশে চাকরি করে অবৈধ উপায়ে সম্পদ গড়েছেন। ইতোমধ্যে উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে মামলার সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করেছে দুদক। চলতি মাসের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে মামলা করা হতে পারে বলেও গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এসআই থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হওয়া উত্তম কুমার নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ঢাকার বেইলি রোডে ফ্ল্যাটসহ একাধিক জমি, বাড়ি, গাড়ির মালিক এই উত্তম কুমার। কথিত আছে, পাশ্ববর্তী দেশ ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকায় গড়েছেন সম্পদ।

উত্তম কুমার আলোচিত বেশকিছু স্বর্ণচোরাচালানের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। সেসময় এসব মামলা থেকে আসামিদের বাঁচিয়ে দিতে অনৈতিক সুবিধা নেন বলে অভিযোগ আছে। তাছাড়া অনেককে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে বিপুল অর্থ নিয়েছেন। যা স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়দের নামে-বেনামে রেখেছেন।

তথ্য রয়েছে, আলোচিত যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন উত্তম কুমার। সেসময় অনেককে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ছিল সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তখন ভয়ভীতি দেখিয়ে কামিয়েছেন বিপুল সম্পদ। অভিযোগ আছে, মিল্কি হত্যা মামলা তদন্তের সময় রাজনৈতিক, ব্যবসায়ীসহ অনেককে আসামি করার ভয় দেখান উত্তম।

রাজধানীর বেইলি রোডের সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের ১৭-১৮ নম্বরের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ‘অ্যাসোর্ট বেইলি নিস্ট’। ভবনে আসছে-যাচ্ছে নামিদামি বিভিন্ন ব্রাণ্ডের গাড়ি। এখানেই সপরিবারে বসবাস সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাসের।

বিলাসবহুল বাড়ির গ্যারেজে আছে উত্তমের একাধিক দামি গাড়ি। ক’দিন আগেও এসব গাড়ি হাঁকিয়ে উত্তমের স্ত্রী, সন্তানরা বের হতেন। তবে এখন সেটা কিছুটা স্তিমিত। দুদকের আবেদনের পর আদালত উত্তম কুমার বিশ্বাসের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এরপর আত্মগোপনে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পরিবার সম্পর্কে বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী বলেন, স্যারের এক ছেলে ঢাকার একটি মেডিকেলে পড়াশোনা করেন; আর মেয়ে বরিশাল মেডিকেল কলেজে পড়েন। স্ত্রী এই বাসাতেই থাকেন। তবে স্যার এখন নেই। স্যার বর্তমানে কিছু ঝামেলায় আছেন। দুদক তাকে খুঁজছে। তবে এসব ঠিক হয়ে যাবে। তার কিছুই হবে না বলেও জানান ওই নিরাপত্তারক্ষী। বলেন, এই বিল্ডিংয়ের সব ফ্ল্যাটই অনেক বিলাসবহুল। স্যার নিজের মতো করে নামি-দামি জিনিস দিয়ে মন মতো ফ্ল্যাট সাজিয়েছেন। সৌন্দর্যের কোনো কমতি রাখেননি।

উত্তম কুমারের নির্দেশ আছে তার বিষয়ে কাউকে কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা জানি স্যার এখনো পুলিশে চাকরি করেন। তিনি যে অবসরে গেছেন সেটা জানতাম না।’

জানা গেছে, বেশির ভাগ সময় উত্তম কুমারকে স্বর্ণ চোরাচালানে হওয়া মামলার তদন্ত দেওয়া হতো। এতে অল্পদিনেই ফুলে ফেঁপে উঠেছিলেন তিনি। চতুর উত্তম অল্পসময়ে বিপুল ধনসম্পদের মালিক বনে যান। কর্মজীবনের একটি বড় সময় সিআইডিতে ছিলেন উত্তম কুমার। সেখানে থাকাকালে বিভিন্ন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হয়ে অবৈধ উপায়ে দেশ-বিদেশে করেন অঢেল সম্পদ। উত্তম কুমারকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা গেলে তার অবৈধ সিন্ডিকেটের আরও সদস্যকে বের করা সম্ভব হবে।

মাগুরার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা উত্তম কুমার ১৯৮৯ সালে এসআই পদে পুলিশে যোগদান করেন। এরপর তিনি পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। পরে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি পেলে তাকে সিআইডিতে পদায়ন করা হয়। এরপর র‌্যাব-২ প্রেষণে বদলি হন। গত বছরের মাঝামাঝি তিনি সিআইডিতে পুনরায় বদলি হন। গত বছর অক্টোবরে অবসরে যান।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত