শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন
সাংবাদিক কাজল ঃ
র্যাংকন আইকন টাওয়ার। গুলশানের ১২৬ নম্বর সড়কের এক নম্বর বাড়ি। স্থপতি মোস্তফা খালিদ পলাশের নকশা করা ১৯ দশমিক ৭৫ কাঠা জমির ওপর তৈরি ১৫তলা এই ভবনটিতে রয়েছে ২৫টি অ্যাপার্টমেন্ট। দুটি বেজমেন্ট। ৩৭টি কার পার্কিং। গ্র্যান্ড রিসিপশন, লাউঞ্জ, রুফটফ জিম, রুফটফ সুইমিংপুল, ছাদ বাগান কী নেই ভবনটিতে। এই ভবনে ২০২৩ সালের ৫ই মার্চ একই দিনে একসঙ্গে ৪টি ফ্ল্যাট কেনেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। নিজের অবসরে যাওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই ২ হাজার ২৪২ বর্গফুটের দুটি ও ২ হাজার ৩৫৩ বর্গফুট আয়তনের দুটি মোট চারটি ফ্ল্যাট কিনেন তিনি। র্যাংকন আইকন টাওয়ারে এই চারটি ফ্ল্যাটের তিনটি সাভান্না ইকো রিসোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মির্জার নামে কেনা। অপর ফ্ল্যাটটি বেনজীর আহমেদের ছোট মেয়ের হয়ে তিনি নিজের নামে কেনেন।মোট ৯ হাজার ১৯২ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটগুলোর তখন দাম দেখানো হয়েছিল মাত্র ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ২ হাজার ৩৫৩ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাটের দাম ৫৬ লাখ টাকা করে। বাকি ২ হাজার ২৪৩ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাটের দাম সাড়ে ৫৩ লাখ টাকা করে। এই মূল্য অবিশ্বাস্য বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বেনজীর আহমদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক বা বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনে আদালত এই আদেশ দেন। ক্রোক করা সম্পত্তির মধ্যে গুলশানের ওই চারটি ফ্ল্যাটও রয়েছে। আদালতের নির্দেশের পর ওই চার ফ্ল্যাট ক্রোক করা সংক্রান্ত নোটিশ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। সরজমিন কয়েক দফা ওই ভবনে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বেনজীর আহমেদ এখন আর এখানে থাকেন না। তিনি মাঝে মাঝে আসেন। চারটি ফ্ল্যাটকে এক করে একটি ডুপ্লেক্স বাসা তৈরি করা হয়েছে। ভবনের উপরের দুই তলার বাসার ছাদে রয়েছে বাগান, সুইমিং পুল ও জিম। এর সবই তৈরি করা হয়েছে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের জন্য।
বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (আরআইইউ) বরাত দিয়ে দেশের আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব জানিয়েছে, রাজধানীতে ফ্ল্যাটের দাম সবচেয়ে বেশি গুলশানে। যা গত বছর ছিল প্রতি বর্গফুট ১৬৬ মার্কিন ডলার, বর্তমানে যা ১৯ হাজার ৪২২ টাকার সমান। এই হিসেবে বেনজীর আহমেদের চারটি ফ্ল্যাটের দাম অন্তত ১৫ কোটি টাকা।
গতকাল সরজমিন ওই ভবন এলাকায় গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, অনেকে আসছে খবর নিতে। ছবি তুলছে। এজন্য ভবনের সামনে একটি কাগজে লিখে দেয়া হয়েছে এখানে ছবি তোলা নিষেধ। ভবনটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মো. হৃদয় হোসেন বলেন, বেনজীর আহমেদের ভবনটিতে চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। তবে তিনি সব সময় সেখানে থাকেন না। ঢাকা শহরে তার অনেকগুলো বাড়ি। কখন কোনটাই থাকেন সেটা বলা যায় না। তবে মাঝে মধ্যে তিনি এই বাসায় আসেন। আর যখন আসেন তখন আশপাশের লোকজন জানতে পারেন বেনজীর আহমেদ এলাকায় আসছেন। তিনি আসলে পুলিশের নিরাপত্তাও থাকে। ভবনে দায়িত্বরত একজন নিরাপত্তাকর্মী জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে লোক আসছিল। তারা এসে আমাদের ম্যানেজার মো. সুজনের সঙ্গে দেখা করে কি যেন কাগজ দিয়ে চলে গেছেন। তারা উপরেও ওঠেনি, ফ্ল্যাটও দেখেনি। ফ্ল্যাট মালিকরা যেভাবে লক করে রেখে গিয়েছিলেন, সেভাবেই আছে। বুধবার দুপুরে মানবজমিনের এই প্রতিবেদক যখন গুলশান ১২৬ নম্বর রোডের ১ নম্বর বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তাকর্মী হৃদয় হোসেনের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনও ভবনটির সামনে পুলিশের দুটি গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। ‘কুইক রেসপন্স টিম’ লেখা একটি সাদা মাইক্রোবাসে বাড়িটির গেটের ঠিক সামনে অপেক্ষারত ছিল একদল পুলিশ সদস্য। রাস্তার উল্টো পাশে বাড়িটির পেছন দিকে গুলশান থানার জিপ গাড়িতে ছিল পুলিশের আরেকটি দল। গত মঙ্গলবারও বেনজীর আহমেদ ওই ফ্ল্যাটে যান এবং কিছু সময় সেখানে অবস্থান করেছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। ফ্ল্যাট ছাড়াও নিজের এবং স্ত্রী সন্তানের নামে বেনজীরের ৬২১ বিঘা জমির সন্ধান পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া তার ও পরিবারের সদস্যদের ৩৩ ব্যাংক হিসাব ও তিনটি বিও হিসাব রয়েছে। যার সব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।